চ্যানেল7বিডি ডেক্স: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিপুল সমর্থন অর্জন করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি বিদেশি দেশগুলোর আস্থা বেড়েছে এবং তারা বিশ্বাস করছে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগোচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা বৃদ্ধি
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাদের বিদেশি বন্ধুদের মধ্যে শঙ্কা ছিল—বাংলাদেশে কী ঘটছে এবং ভবিষ্যতে কী হবে? কিন্তু আমরা তাদের আশ্বস্ত করতে পেরেছি যে, বাংলাদেশ ইতিবাচক পরিবর্তনের পথে রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় কিছু চ্যালেঞ্জ আসা স্বাভাবিক ছিল। তবে, সরকার দক্ষতার সঙ্গে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
অর্থনীতি ও কূটনীতিতে বাংলাদেশের সাফল্য
তিনি জানান, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে চলেছে। “বিশ্বব্যাপী আমরা ইতিবাচক বার্তা দিতে পেরেছি যে, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছে,” বলেন তিনি।
উপদেষ্টা আরও জানান, অধ্যাপক ইউনূস আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন এবং বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিয়ে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করছেন। “আমরা কূটনৈতিক কার্যক্রমে ড. ইউনূসের বিশ্বব্যাপী সুনামকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছি,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের নতুন অধ্যায়
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে টানাপোড়েন বজায় রেখেছিল। তবে আমরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছি এবং ইতিমধ্যে ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দুই দেশ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে অভিন্ন স্বার্থ রয়েছে, যা উভয় দেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। এ কারণেই সমুদ্র যোগাযোগ পুনরায় চালুর মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা
ঢাকা-নয়াদিল্লির সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, “কিছু অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে, যা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। তবে আমরা সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কাজ করছি।” তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের টেলিফোন আলাপ এবং জাতিসংঘে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ ইতিবাচক অগ্রগতি নির্দেশ করে।
বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত অংশীদারিত্ব
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, তার সাম্প্রতিক চীন সফরে উন্নয়ন প্রকল্প, বাণিজ্য এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। “আমরা বেইজিংকে ঋণের সুদের হার কমানো এবং পরিশোধের সময়কাল ২০ বছর থেকে ৩০ বছর বাড়ানোর অনুরোধ করেছি, যা ইতিবাচকভাবে বিবেচিত হচ্ছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসার নতুন গন্তব্য হিসেবে কুনমিংয়ে দুই থেকে তিনটি হাসপাতাল নির্ধারণের পরিকল্পনা রয়েছে, যা ভারতীয় ভিসা জটিলতার বিকল্প হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের স্থিতিশীলতা
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “নতুন মার্কিন প্রশাসন আসার পর তেমন কোনো বড় পরিবর্তন হবে না বলে আমরা মনে করি।” তিনি আরও বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের সাহায্য হ্রাসের সিদ্ধান্ত প্রত্যাশিত ছিল এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট দেশকে লক্ষ্য করে নেওয়া হয়নি।
ভারসাম্যপূর্ণ পররাষ্ট্রনীতি বজায় রাখার লক্ষ্য
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, “ভারত, চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র—এই তিনটি দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।” তিনি বলেন, “আমরা জাতীয় স্বার্থ বজায় রেখে কৌশলগতভাবে কাজ করব এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করব।”
উপসংহার
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমের ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অর্থনীতি ও কূটনীতিতে বাংলাদেশ দৃঢ় অবস্থান তৈরি করেছে। ভবিষ্যতে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সরকার কৌশলগতভাবে কাজ করে যাবে।
তথ্যসূত্র: বাসস