চ্যানেল7বিডি ডেক্স: জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আগে জরুরি রাজনৈতিক সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি শেষ করে নির্বাচন আয়োজন করা হলে, পরবর্তীতে সংস্কারের কাজ কি বন্ধ হয়ে যাবে?
তিনি আজ রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেমন প্রার্থী চাই’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এ মন্তব্য করেন। স্কুল অব লিডারশিপ ইউএসএ আয়োজিত এই সেমিনারে রাজনৈতিক নেতারা আগামী নির্বাচন ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে মতবিনিময় করেন।
বিএনপির দৃষ্টিকোণ: নির্বাচন ও সংস্কারের সমন্বয় জরুরি
ড. মঈন খান বলেন,
মানুষ ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে না কেন? এক-এগারোর যে পরিকল্পনা ছিল, বিরাজনীতিকীকরণ, সেই সমস্যার ছায়া আজও বিদ্যমান।
তিনি আরও বলেন, রাজনীতিতে আসার উদ্দেশ্য যদি শুধু পদ-পদবি আর ক্ষমতা হয়, তাহলে গণতন্ত্র ব্যাহত হবে। জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে, তাদের মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে।
সংস্কার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা
তিনি বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমেই বর্তমান শাসনের পতন ঘটবে। তার মতে, অন্তর্বর্তী সরকারের মূল দায়িত্ব স্বৈরাচারী শাসন থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রূপান্তর নিশ্চিত করা।
নেতৃত্ব নির্বাচনে কাঠামোগত পরিবর্তনের দাবি
সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন,
দলবাজি করে কর্মী তৈরি করলে হবে না, কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে হবে। জনগণের মন জয় করেই নেতা হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, নারী ক্ষমতায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই নির্দিষ্ট সংখ্যক নারী প্রার্থী মনোনয়ন দিতে হবে।
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি ও স্বচ্ছতা
জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন বলেন,
সংখ্যানুপাতিক (PR) পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে সহিংসতা কমবে। কালোটাকার প্রভাব হ্রাস পাবে এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড কমবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন,
একজন প্রার্থীর ভালো হওয়া যথেষ্ট নয়, তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারবেন কিনা সেটিও বিবেচনা করতে হয়। রাজনৈতিক দলগুলোর আদর্শই নির্ধারণ করে কাকে প্রার্থী করা হবে।
সুষ্ঠু নির্বাচন ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের মানদণ্ড
সংলাপে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মতিনুর রহমান বলেন,
সঠিক ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচনের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা, রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, নেতৃত্বের দক্ষতা ও দূরদর্শিতা অপরিহার্য।
সংলাপে অন্যান্য বিশিষ্টজনদের অংশগ্রহণ
সংলাপে সভাপতিত্ব করেন স্কুল অব লিডারশিপের ভাইস প্রেসিডেন্ট মেজর (অব.) রুহুল আমিন চৌধুরী এবং সঞ্চালনা করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক জামিল আহমেদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন:
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ফরহাদ হালিম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান এম এম শরীফুল করিম
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শিশির মনির
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ
উপসংহার
সংলাপে বক্তারা সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচনই জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না।
তথ্যসূত্র: বাসস