চ্যানেল7বিডি ডেক্স: সিয়েরা লিওনের দ্বিতীয় সরকারি বা রাষ্ট্রভাষা বাংলা—এমন তথ্য দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত থাকলেও এটি সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেছে ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানার।
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২০০২ সাল থেকে প্রায় প্রতি বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সময়ে এই দাবি সামনে আসে। অনেকে মনে করেন, বাংলা সিয়েরা লিওনের অন্যতম সরকারি, দাপ্তরিক বা রাষ্ট্রভাষা। এমনকি বিভিন্ন গণমাধ্যম, ওয়েবসাইট, পাঠ্যবই এবং বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নেও বিষয়টি উঠে এসেছে।
ফ্যাক্টচেক অনুসন্ধান: দাবির সত্যতা নেই
রিউমার স্ক্যানার জানায়, দীর্ঘ অনুসন্ধানে তারা দেশি-বিদেশি ৫০টিরও বেশি গবেষণা ও নথি পর্যালোচনা করেছে। বাংলাদেশ এবং সিয়েরা লিওনের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং দাবির মূল উৎস খোঁজার চেষ্টা করেছে।
ফ্যাক্টচেক টিমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিয়েরা লিওনের একমাত্র সরকারি ভাষা ইংরেজি। দেশটিতে ক্রিও, লিম্বা, মেন্দে, তেমনেসহ আরও কয়েকটি স্থানীয় ভাষা প্রচলিত রয়েছে, তবে বাংলা ভাষার কোনো স্বীকৃতি বা ব্যবহার পাওয়া যায়নি।
বাংলা ভাষা নিয়ে বিভ্রান্তির উৎস
ফ্যাক্টচেক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ২০০২ সালে সিয়েরা লিওনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বাহ বাংলা ভাষাকে সম্মানসূচক ভাষা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এটি মূলত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ছিল। তবে এটি কখনোই সরকারি ভাষা বা রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায়নি।
২০২৩ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় নিযুক্ত সিয়েরা লিওনের রাষ্ট্রদূতও এক বক্তব্যে বলেন, বাংলা একটি সম্মানসূচক ভাষা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল, কিন্তু তা সরকারিভাবে স্বীকৃত হয়নি।
সিয়েরা লিওনের ভাষাগত বাস্তবতা
একমাত্র সরকারি ভাষা: ইংরেজি
সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা: ক্রিও (প্রায় ৯৭% মানুষ বোঝে ও ব্যবহার করে)
অন্য প্রধান ভাষাগুলো: মেন্দে, তেমনে, লিম্বা ইত্যাদি
ফ্যাক্টচেক সংস্থা Translators Without Borders-এর এক গবেষণা অনুসারে, সিয়েরা লিওনে বাংলা ভাষার কোনো কার্যকর ব্যবহার নেই।
ফ্যাক্টচেক সংস্থার পরামর্শ
রিউমার স্ক্যানার এবং পশ্চিম আফ্রিকার ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা দুবাওয়ার বিশ্লেষণে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সিয়েরা লিওনে বাংলা কখনোই সরকারি ভাষা ছিল না। তাই বিভ্রান্তি এড়াতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের নিশ্চিত তথ্য যাচাই করে প্রচার করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তথ্যসূত্র: বাসস