জেলা প্রতিনিধি : লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দূর্গম মেঘনার মেঘার চরে ৩০ জন কৃষকের ১২’শ একর কোটি টাকার ফসল (সয়াবিন) লুটপাট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সংজ্ঞবদ্ধ দস্যু বাহিনীর বিরুদ্ধে। গত কয়েকদিন থেকে বিস্তৃন্ন চরজুড়ে সশস্ত্র মহড়া আর লাল পতাকা প্রদর্শনের মাধ্যমে ভয়-ভীতি ও আতংক সৃষ্টি করা হচ্ছে। চরের পশ্চিম এলাকা থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে চাষাবাদ করা কৃষকদের। প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সেনাক্যাম্প বরাবর আবেদন করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।
রোববার (১৩ এপ্রিল) কাছিয়ার চরের মালিকানা ফসল (সয়াবিন) উদ্ধার করতে রায়পুরের বামনী ইউপির সাগরদী গ্রামের মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে কামরুল হোসেন ৩০ জন অসহায় কৃষকদের পক্ষ নিয়ে বাদি হয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী পরিচয়দানকারী ৫৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সরেজমিন জানা যায়, মেঘনা নদীতে জেগে ওঠা কাছিয়ার চর ও চর কানিবগায় দীর্ঘদিন থেকে ফসল চাষ করে আসছে রায়পুর উপজেলার শতাধিক কৃষক। প্রতিবারের ন্যায় এবারও তারা সয়াবিন চাষ করেছেন। কয়েকদিন ধরে ফসল তোলাও শুরু হয়েছে । কিন্তু প্রকৃত জমির মালিকরা ফসল তুলতে পারছেন না। রায়পুরের উত্তর চরবংশী ও দক্ষিন চরবংশী ইউপির কয়েকজন বিএনপি নেতার পক্ষ নিয়ে ভোলা ও মেহেদীগন্জ থেকে আসা শতাধিক জলদস্যু ঐ চরে অবস্থান নিয়ে কৃষকদের উপর চওড়া হয় ও বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে চর থেকে তাদের তাড়িয়ে দিচ্ছে। এতে করে কৃষকরা তাদের চাষকৃত সয়াবিন আনতে পারছেন না। চরে উঠতে গেলে কৃষকদের উপর হামলা চালানো হয়। কৃষকদের সয়াবিন গুলো ঐ দস্যুরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন।.
ভুক্তভোগী কামরুল হোসেন বলেন, ৫ আগষ্টের পর থেকে স্থানীয় সাহাবুদ্দিন লস্কর, ছলেমান, জাকির বেপারি, দেলু প্রধানিয়া, ইসমাইল বেপারী, জাকির হাওলাদার ও মোতালেব বেপারীসহ ৫৪ প্রভাবশালী ও লাঠিয়াল ব্যাক্তি আমাদের ফসল উঠাতে দেয়না। সন্ত্রাসীরা চার- পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছে। না দিলে চাষীদের সব ফসল তুলে লুটপাট করে নেয়। কয়েকজনের মদদে আমাদের সকল ফসল লুট করে তারা। গত বছরেও ফসল আনতে গিয়ে আ’লীগ নেতাদের গুলির মুখে পড়তে হয় । গুলি করে কয়েকজনকে নদীতে ফেলে দেয়।.এসব চরের জমি দখল নিয়ে পৃথক দুটি দেওয়ানি মামলা চলছে (কানিবগারচর মৌজার (জেএল নং-৫১, দাগ নং ১০০১,১০০২, ১০০৩, ২০০১, ৩০০১, ৩০০২ দাগান্তরে ৫২৯.৭০+৬৩৯.০০= ১১.৬৮.৭০ একর ভূমি)। যাহার উত্তরে ঘাসিয়া, দক্ষিনে ও পুর্বে কাছিয়ার চর পশ্চিমে জেগে উঠা নতুন চর।।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ মিন্টু ফরায়েজি বলেন, চার বছর আগে রায়পুরসহ সদরের চর মেঘায় সন্ত্রাসীরা রাকিব এবং শেখ ফরিদকে হত্যা করে। অনেকের হাত পা কেটে দেয়া হয়। কয়েকদিন ধরে সয়াবিন তোলা হচ্ছে। কৃষকরা সয়াবিন তুলতে গেলে ২০-৩০ জনের বাহিনী ফসল লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। আমি প্রশাসনের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি এ বিষয়ে যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করে। কৃষকদের ফসল যাতে ঘরে আনতে পারে। কৃষকরা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে।.
রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভুইয়া বলেন, কামরুল হোসেন নামের এক কৃষক বাদি হয়ে ৫৪ জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। আমরা একটা অভিযান করবো। যারা অভিযুক্ত এবং এমন কার্যক্রমের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। .
উল্লেখ্য-শেখ হাসিনার পতনের পর রায়পুরের পশ্চিম মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা দুর্গম চরের জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে উত্তর ও দক্ষিন চরবংশী ইউপির বিএনপির নেতারা। মেঘনার ভাঙনের শিকার ভিটামাটি হারানো হাজারও মানুষ একটু মাথা গোঁজার জন্য ছুটে যান দুর্গম চরাঞ্চলে। দুই হাজার সাতশত একরের বিশাল চরাঞ্চলের এসব অনাবাদি জমিকে আবাদি করে তুলতেই প্রভাবশালীদের নজর এখন এই চরে। গত ১৭ বছর ভূমি দস্যু আলতাফ মাস্টারসহ কয়েকজন আ’লীগ নেতার দখলে ছিল চরের সরকারি খাস জমি। ২০ ও ২১ ডিসেম্বর মেঘনার চরের জমি, মাছঘাট ও বাজার দখলকে কেন্দ্র করে কয়েক দফায় উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শামিম গাজিসহ তার অনুসারী ও উত্তর চরবংশী ইউপির বিএনপি ফারুক গাজীসহ তার অনুসারীদের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে দলীয় কার্যালয়, মাছের আড়ত, বসতঘর, দোকানপাট ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।