রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বের প্রকৃতি

অনলাইন ডেক্স: মহান আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মাঝে ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বের এক অনন্য সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। তিনি ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক ছিলেন এবং মদিনায় প্রথম ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন। সেই রাষ্ট্রই একসময় পৃথিবীর প্রভাবশালী রাষ্ট্রব্যবস্থার রূপ নেয়। নবুয়তপ্রাপ্তির আগে তাঁর পরিবার মক্কার পবিত্র কাবার দেখভালের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করত।

তবে রাসুলুল্লাহ (সা.) কি একজন শাসক বা বাদশাহ ছিলেন? নাকি তাঁর নেতৃত্বের ধরণ ছিল ভিন্ন?

রাসুলুল্লাহ (সা.) বাদশাহ ছিলেন না
প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করলেও প্রচলিত অর্থে বাদশাহ ছিলেন না। কারণ, একজন বাদশাহ সাধারণত নিজের সর্বোচ্চ সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন এবং জবাবদিহির ঊর্ধ্বে থাকেন। কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সা.) সবসময় আল্লাহর সার্বভৌমত্বে বিশ্বাসী ছিলেন এবং নিজেকে আল্লাহর প্রতি জবাবদিহি মনে করতেন।

বাদশাহদের মধ্যে জুলুম ও স্বেচ্ছাচারিতার প্রবণতা দেখা যায়, যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসুল এবং দ্বিন বাস্তবায়নের আল্লাহর প্রতিনিধি।

খলিফা ও বাদশাহর মধ্যে পার্থক্য
শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.) তাঁর গ্রন্থ ইজালাতুল খিফা-তে খলিফা ও বাদশাহর মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছেন।

একবার ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) সালমান ফারেসি (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, খলিফা ও বাদশাহর মধ্যে পার্থক্য কী। সালমান (রা.) বলেন,

"খলিফা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেন, গনিমতের সম্পদ সমানভাবে বণ্টন করেন এবং প্রজাদের সঙ্গে পরিবারের মতো আচরণ করেন।"

অন্যদিকে, মিম্বারে বসে মুয়াবিয়া (রা.) বলেন,
“খিলাফত হলো সত্যের ওপর চলা, ইনসাফের সঙ্গে ফয়সালা করা এবং আল্লাহর বিধান বাস্তবায়ন করা।”

রাসুলুল্লাহ (সা.) বাদশাহি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন
হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার বলেন,

"আমার কাছে একজন ফেরেশতা এলেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে জানালেন, আমি চাইলে নবী ও বাদশাহ হতে পারি অথবা নবী ও বান্দা হতে পারি। আমি জিবরাইলের (আ.) দিকে তাকালাম এবং তাঁর ইঙ্গিতে ‘নবী ও বান্দা’ হওয়ার পথ বেছে নিলাম।" (মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস: ৫৮৩৫)

নবী ও বান্দার শ্রেষ্ঠত্ব
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, নবীরা দুই শ্রেণিতে বিভক্ত:
আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
নবী ও বাদশাহ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) নবী ও বান্দা হওয়ার মর্যাদা বেছে নিয়েছিলেন। বান্দা রাসুলের মর্যাদা বাদশাহ নবীর তুলনায় বেশি। (আল ফোরকান বাইনা আউলিয়াইর রহমান ওয়া বাইনা আউলিয়াইশ শয়তান, পৃষ্ঠা-৩৫)

আল্লাহ আমাদের সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *