চ্যানেল7বিডি ডেক্স: ফরিদপুর, বাংলাদেশ – দেশের অন্যতম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা ফরিদপুরে এবার পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনের বাজারমূল্য ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
দেশের চাহিদার ৫০% পেঁয়াজ বীজ সরবরাহ করে ফরিদপুর
গত এক যুগ ধরে ফরিদপুর দেশের সরকারি পেঁয়াজ বীজের ৫০% এর বেশি সরবরাহ করছে। এখানকার উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য আদর্শ, যা ফরিদপুরকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম পেঁয়াজ উৎপাদনকারী জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
স্থানীয় কৃষকদের মতে, পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন ‘কালো সোনা’ হিসেবে পরিচিত। কারণ এটি চাষ করে তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বর্তমানে জেলার সদর, বোয়ালমারী, ভাঙ্গা, মধুখালী ও সদরপুর উপজেলার মাঠগুলো সাদা ফুলে ছেয়ে গেছে, যা নজরকাড়া সৌন্দর্য তৈরি করেছে।
পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে কৃষকদের ব্যস্ত সময়
সরেজমিনে দেখা গেছে, কৃষক ও কৃষাণিরা পেঁয়াজ বীজের পরাগায়নের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ প্রসঙ্গে অম্বিকাপুরের কৃষাণী শাহেদা বেগম ও লাভলী পারভিন বলেন—
পেঁয়াজ বীজের চাষ ছোট শিশুর মতো যত্ন নিয়ে করতে হয়। নভেম্বর-ডিসেম্বরে আবাদ শুরু হয়, আর এপ্রিল-মে মাসে ফলন সংগ্রহ করা হয়। এরপর এক বছর সংরক্ষণ করে বীজ বিক্রি করা হয়।
তবে তারা জানান, মৌমাছির সংখ্যা কমে যাওয়ায় হাত দিয়ে পরাগায়নের কাজ করতে হচ্ছে, যা সময়সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য।
বাহিরের জেলা থেকে শ্রমিকদের আগমন
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা ফরিদপুরে পেঁয়াজ বীজ খেতে কাজ করতে আসছেন। পাবনা থেকে আসা আনোয়ার, কুষ্টিয়া থেকে আসা আব্দুর রহমান প্রামানিক, রহিম মোল্লা, শইব্রাহিম শেখসহ অনেকেই জানান—
এই মৌসুমে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করি, যাতে ভালো মানের পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন হয়। এতে মালিক যেমন লাভবান হন, তেমনি আমাদেরও আর্থিক উন্নতি হয়।
পেঁয়াজ বীজ উৎপাদন ও বাজার মূল্য
কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছর ফরিদপুরে ১,৮৫৪ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। এ থেকে প্রায় ৯৬৪ টন বীজ উৎপাদন হবে, যার বাজার মূল্য ৫০০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আনোয়ার হোসেন বলেন—
ফরিদপুরের পেঁয়াজ বীজের গুণগত মান ভালো হওয়ায় চাহিদা সর্বত্র রয়েছে।
বাজারে এর দাম ২ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ওঠে, তাই একে ‘কালো সোনা’ বলা হয়।
পরাগায়নের সমস্যা ও সমাধান
সম্প্রতি মৌমাছির সংখ্যা কমে যাওয়ায় পরাগায়নের সমস্যা দেখা দিয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের হাত দিয়ে কিভাবে পরাগায়ন করতে হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. শাহাদুজ্জামান বলেন—
এই বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পেঁয়াজ বীজ আবাদ হয়েছে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার বীজ উৎপাদন ভালো হবে এবং ৫০০ কোটি টাকার বাজার গড়ে উঠবে।
পেঁয়াজ ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে দর্শনার্থীদের ভিড়
এবার বাম্পার ফলনের কারণে ফরিদপুরের বিভিন্ন মাঠ সাদা পেঁয়াজ ফুলে ভরে গেছে। এতে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা ছবি তুলতে ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন। কেউ কেউ আবার দলবেঁধে আসছেন শুটিং ও ফটোগ্রাফির জন্য।
তথ্যসূত্র: ইউএনবি নিউজ