পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান তারেক রহমানের

চ্যানেল7বিডি ডেক্স: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পতিত স্বৈরাচার ও তার দোসরদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

শনিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে আব্বাস উদ্দিন খান মডেল কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।

তারেক রহমান বলেন, পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকার টানা দেড় দশক ক্ষমতায় ছিল। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের শাসনামলে জনগণ নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। মানুষ ভয়ে কথা বলতে পারেনি। এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে। স্বৈরাচার চলে গেলেও তার দোসররা রয়ে গেছে। তাদের মোকাবিলায় দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আগামী দিনে সংসদ কীভাবে পরিচালিত হবে, সংসদের মেয়াদ কত দিন হবে এবং এক ব্যক্তি কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এসব বিষয় আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। তবে এসব নিয়ে অতিরিক্ত বিতর্কে জড়িয়ে পড়লে রাষ্ট্র পুনর্গঠন থেকে আমরা পিছিয়ে পড়ব।

বিএনপি নেতা বলেন, স্বৈরাচারের মূল নায়ক পালিয়ে গেলেও তার দোসররা রয়ে গেছে। তারা বিভিন্নভাবে মাথাচাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছে। নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে তারা আবার দেশ দখলের চেষ্টা করছে। তাদের এই লক্ষ্য হাসিল করতে দেওয়া হবে না। এ জন্য যেকোনো মূল্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তবে আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করা হবে। বড় দল হিসেবে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের দায়িত্ব অনেক বেশি।

তারেক রহমান বলেন, বিগত ১৫ বছর জনগণের ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। ভোটারবিহীন নির্বাচন, ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। উন্নয়নের নামে লক্ষ-কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে পুনর্গঠন করতে হবে। একমাত্র বিএনপিই জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশ গড়তে পারে। আমরা রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ৩১ দফা কর্মসূচি দিয়েছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বেকারত্ব দূরীকরণ, কৃষি ও শিল্পখাতের উন্নয়ন এ কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমরা যদি নিজেদের স্বার্থ নিয়ে তর্কে লিপ্ত থাকি, তাহলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার।

এর আগে সম্মেলন উদ্বোধন করেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. বরকত উল্লাহ বুলু। তিনি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের অবদানের কথা স্মরণ করে বলেন, শহীদ জিয়া কাউকে হত্যা করে ক্ষমতায় আসেননি। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সিপাহী-জনতা তাকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। তিনি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। বৈদেশিক শ্রমবাজার ও পোশাক শিল্পের বিকাশে তার অবদান অনস্বীকার্য।

জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক এডভোকেট আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বক্তব্য দেন দলের কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক আহমেদ, কেন্দ্রীয় অর্থনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন শ্যামল প্রমুখ।

দীর্ঘ ১২ বছর পর জেলা বিএনপির এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় উৎসবের আমেজ তৈরি হয়। শনিবার সকাল থেকেই বিভিন্ন উপজেলা থেকে নেতা-কর্মীরা রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করে সমাবেশস্থলে জড়ো হন। দুপুরের আগেই সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র: বাসস

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।