ট্রাকচাপায় নিহত ফায়ার ফাইটার নয়ন: একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবার

অনলাইন ডেক্স: সোহানুর জামান নয়ন, মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে জীবন উৎসর্গ করেছেন। ২০২২ সালে ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেওয়া এই তরুণ ঢাকার তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় ট্রাকচাপায় আহত হয়ে তিনি মারা যান। দুর্ঘটনাটি ঘটে বুধবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর ভোর পৌনে চারটার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নয়নের গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুর থানার আটপনিয়া গ্রামে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন ছোট। নয়নের বাবা আক্তারুজ্জামান কৃষিকাজ করেন। অভাবের সংসারে নয়নই ছিলেন পরিবারের একমাত্র অবলম্বন। তার অকাল মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তার বাবা-মা।

দুর্ঘটনার বিবরণ
ফায়ার সার্ভিসের সদস্য মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সচিবালয়ে অগ্নি নির্বাপণে কাজ করার সময় মালামাল নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন নয়ন। এ সময় জিরো পয়েন্টের দিক থেকে আসা একটি দ্রুতগামী ট্রাকের ধাক্কায় নয়নসহ আরও একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর নয়নকে মৃত ঘোষণা করা হয় এবং আহত হাবিবুর রহমান চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

পরিবারের কান্নার সুর
নয়নের চাচাতো ভাই রাকিবুল ইসলাম জানান, নয়ন ২০২২ সালের ২ অক্টোবর ফায়ার সার্ভিসে যোগ দেন এবং পরে তেজগাঁও ফায়ার স্টেশনে ফায়ার ফাইটার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে।

ঘটনাস্থলে নয়নের হেলমেট পড়ে থাকতে দেখা যায়। পিচঢালা রাস্তায় রক্তের দাগ এখনো জ্বলজ্বল করছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, নয়ন রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগতির ট্রাক তাকে ধাক্কা দিলে তিনি পড়ে যান এবং মাথায় থাকা হেলমেট খুলে যায়। ঘটনার পর শিক্ষার্থীরা ট্রাকচালককে আটক করেন।

শ্রদ্ধাঞ্জলি ও শেষ বিদায়
গতকাল দুপুরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের প্রাঙ্গণে নয়নের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।

জানাজার আগে নয়নের কফিনে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং অগ্নিসেনাদের একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। পরে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সে করে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।

রাষ্ট্রীয় প্রতিশ্রুতি
জানাজা শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নয়নের আত্মত্যাগ জাতি চিরকাল স্মরণ করবে। তার পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে এবং এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।’

শেষ কথা
ফায়ার ফাইটার নয়নের মৃত্যু শুধু তার পরিবার নয়, পুরো জাতির জন্যই এক অপূরণীয় ক্ষতি। এই তরুণ তার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। নয়নের অবদান জাতি চিরকাল মনে রাখবে, আর তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এখন আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *