ডেস্ক রিপোর্ট : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে রবিবার (১৭ নভেম্বর) জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল সময় অতিক্রম করছি। গতকাল (রবিবার) অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিন পূর্তি উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে বক্তব্য দিয়েছেন। তার বক্তব্যে অনেকে আশান্বিত, তবে আমি একটু আশাহত হয়েছি। আমি আশা করেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টা মহোদয় তার সমস্ত প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে নির্বাচনের রূপরেখা দেবেন।
সোমবার (১৮ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে ‘মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী’ উপলক্ষে বিএনপির ‘মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি’ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
‘আমি কেন বারবার নির্বাচনের কথা বলছি’ এমন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচন দিলেই আমার অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সেখানে নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসুক আর না আসুক এটা ইমমেটেরিয়াল। যারা দেশের ক্ষতি করতে চাচ্ছে, অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে চায়, তারা পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ নির্বাচিত সরকারের পেছনে জনগণের সমর্থন থাকবে। আমরা সংস্কার চাই, করবো, তবে সেগুলো যেন সুন্দর হয়, সবার কাছে যেন গ্রহণযোগ্য হয়, সেভাবে এগিয়ে যান— এটাই আমাদের অনুরোধ।
তিনি বলেন, আমরাতো সরকারকে বাধা দিচ্ছি না বরং সমর্থন জানাচ্ছি। কিন্তু সচিবালয় বসে থাকা স্বৈরাচারের দোসরদের রেখে কিভাবে সংস্কার করবেন? দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট এখনও ভাঙতে পারেননি, মানুষ অশান্তিতে আছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে, তবুও মেনে নিয়েছে আপনাদেরকে। সিন্ডিকেটগুলো ভেঙে ফেলার ব্যবস্থা করেন। গভর্নেন্স ঠিক করেন। কোনও কাজে গেলে যেন টাকা না লাগে।
মহাসচিব বলেন, ছাত্রদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না। এরা তরুণ, এদের উদ্দীপনা এমনই। আমরা যখন তরুণ ছিলাম তখনও তো আমরা এমনই ভাবতাম। এখন একটা পরিবর্তন এসেছে, এটাকে বুঝতে হবে— ছেলেরা কী বলছে? বিএনপির মধ্যে অনেকেই আছে এটা বলতে রাজি না, ছেলেরা এই লড়াইটা একাই করেছেন। আমরা ১৫ বছর লড়াই করেছি, রক্ত দিয়েছি কিন্তু একটা বিষয় আছে, গোল দিতে শেষ লাথিটা বলে কে দিয়েছে?
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনারাতো কম কষ্ট করেননি, কিন্তু বুক পেতে দিতে দাঁড়াননি। সাঈদ যেভাবে বুক পেতে দাঁড়িয়েছে সেটাই আন্দোলনের টার্নিং পয়েন্ট। ছাত্ররা অনেক কথা বলছে, বলবেই। আমাদের বয়স হয়ে গেছে, আমরা অনেক হিসাবি— কী করা যাবে, কী করা যাবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, দ্রুত নির্বাচন হলেই দেশের জন্য মঙ্গলজনক। আমরা দেখেছি, ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের আমলে কিংস পার্টি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল তারা। বর্তমান সরকারের ক্ষমতা থাকাযর কোনও ম্যানডেট নেই, তেমন কোনও শক্তি নেই। তাই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান তিনি। তা না হলে মানুষ ভাববে দীর্ঘদিন ক্ষমতার থাকার চেষ্টা করছেন আপনারা, যেমন করেছিলেন ফখরুদ্দিন- মঈনুউদ্দিন।
মওলানা ভাসানী রাজনৈতিক দর্শন তুলে ধরে তিনি বলেন, মওলানা ভাসানী বলেছিলেন ‘এদেশে ধর্মকে বাদ দিয়ে কোনও কাজ হবে না, এদেশের মানুষ ধর্মকে বাদ দিয়ে কোনও কাজ করে না।’ তাই তিনি ধর্ম কর্ম সমাজতন্ত্রের কথা বলেছিলেন। তার জীবন পরিচালনা ছিল অত্যন্ত সাধারণ। জীর্ণশীর্ণ ঘরে বসবাস করতেন তিনি। আমরা তাকে কী করে ভুলবো? আমাদের পুরো অস্তিত্বজুড়েই তো তিনি। তিনি প্রথম আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছিলেন। পর্যায়ক্রমে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়েছিল তিন দিনের মাথায় আইয়ুব খান পদত্যাগ করেছিলেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে ও কৃষক দলের নেতা এস কে সাদির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান লায়ন ফারুক রহমান প্রমুখ।