বিশেষ প্রতিনিধি: রোববার শপথ নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা প্রথমবারের মতো অফিসে যোগ দেন এবং কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। তারা ন্যায় প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দিয়ে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
উপদেষ্টারা আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এ উপলক্ষে প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বরণের জন্য প্রস্তুতি নেয়। সকাল থেকেই সচিবালয় সরগরম হয়ে ওঠে, এবং উপদেষ্টারা সেখানে উপস্থিত হন। তাদের ফুল দিয়ে বরণ করা হয়, এবং এরপর তারা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচিত হন ও মতবিনিময় করেন। তারা সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন।
এর আগে পুরোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের নামফলক পরিবর্তন করে উপদেষ্টাদের নামফলক বসানো হয়। শুক্র ও শনিবার এই কাজ সম্পন্ন করেন সচিবালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রথম কর্মদিবসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সচিবালয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তাদের সমস্যার কথা শোনেন। সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুরশিদ বলেন, “চ্যালেঞ্জ মনে করলে অনেক কিছু, তবে কাজ করতে চাই। যে পরিবর্তনের কথা বলেছি, সেটা বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।” পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সারা জীবন ন্যায় প্রতিষ্ঠায় কাজ করেছি, এই লক্ষ্য রেখেই এগোতে চাই।”
অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, “কর্মকর্তাদের নিষ্ঠার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করার কথা বলেছি। কোনো কিছু ফেলে রাখা যাবে না। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি এটিএম থেকে টাকা তোলার সীমা নির্ধারণের বিষয়ে বলেন, “টাকা নেই তা নয়; নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এটি করা হয়েছে। পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হবে।”
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের গায়ে যেন হাত না পড়ে।” চাঁদাবাজির প্রসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “চাঁদাবাজি করবেন না, জনগণকে বলব, আপনাদের পিটিয়ে ওখানেই ধরে রাখতে।”
যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ জানান, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব ইনস্টিটিউটের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশ জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউট’ করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা একটি কঠিন সময় পার করছি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেন, “ভুলগুলো যতটা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।” তিনি জানান, স্থানীয় সরকার বিভাগের এক হাজারেরও বেশি মামলা রয়েছে এবং এসব সমস্যার সমাধানে কাজ করা হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আকতার বলেন, “মানসম্মত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি আরও জানান, সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত কার্যালয়গুলো দ্রুত সংস্কার করা হবে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, “কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধ রাখার বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।” তিনি বলেন, “ইন্টারনেট ব্যবহারের অধিকার এখন মানবাধিকার। এটি বিবেচনায় রেখে ইন্টারনেট সীমিত করতে হবে।”
প্রথম কর্মদিবসে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সাতটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠন, আহত আন্দোলনকারীদের চিকিৎসার খরচ সরকার বহন করবে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার সমাধানে প্রধান উপদেষ্টা সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি ও গোষ্ঠীর সঙ্গে আলোচনা করবেন, এবং মেট্রোরেল ১৭ আগস্ট চালু হবে।