নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজধানীতে আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা জনমত গঠনে গণমাধ্যমের বলিষ্ঠ ভূমিকা তুলে ধরে বলেছেন, গণতন্ত্র, সুশাসন ও উন্নয়নের সাথে গণমাধ্যমের সম্পর্ক নিবিড়তম। সরকার প্রশাসন যন্ত্রের মাধ্যমে যে উন্নয়নযজ্ঞ চালায় সে সম্পর্কে গণমাধ্যমই জনগণকে অবগত করাতে পারে।
দৈনিক আমার কাগজ’র ২১ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলের মেঘনা হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘উন্নয়ন প্রশাসন ও গণমাধ্যম’।
দৈনিক আমার কাগজ সম্পাদক ফজলুল হক ভূইয়া রানার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসেবে ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন, সুরক্ষা সেবা বিভাগের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) সিনিয়র সচিব মো. মশিউর রহমান এনডিসি, বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যামসুন্দর সিকদার, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. আমিন উল্লাহ নূরী, নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ, সিনিয়র সাংবাদিক ও সাংবাদিক নেতা এম এ আজিজ এবং জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফা।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন দৈনিক আমার কাগজ’র উপদেষ্টা সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা হোসেন এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি হাজী আলাউদ্দিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন হাসান মাহমুদ ও আফরোজা নাইচ রিমা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন তালুকদার, সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন, সাবেক সচিব নূর মোহাম্মদ মজুমদার, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিদুল ইসলাম, বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফয়েজ আহমেদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তন্ময় দাস, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা মো. শাহেনুর মিয়া, অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায়, সাবেক অতিরিক্ত সচিব এস এ এম ফজলুল কবির, সাবেক অতিরিক্ত সচিব স্বপন কুমার সরকার ও সিরাজুল হায়দার, চীনের কুনমিংয়ে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল-এর সাবেক কনসাল জেনারেল এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউটের প্রধান নির্বাহী ফায়জুল হক, গণমাধ্যমের সাথে সমন্বয় ও উন্নত সেবা প্রদান প্রকল্পের পরিচালক মো. মমিনুল হক জীবন, যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান, পুলিশ স্টাফ কলেজের ভাইস রেক্টর (ডিআইজি) মো. রেজাউল হক, সাবেক ডিআইজি মেজবাহুন নবী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর, জাতীয় পুষ্টি পরিষদের মহাপরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবিরসহ অনেক সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তা ও গণমাধ্যম কর্মী।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুকে সময়োপযোগী উল্লেখ করে বলেছেন, প্রশাসন গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ ভূমিকা প্রত্যাশা করে। তিনি বলেন, উন্নয়ন ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডে ব্যর্থতা থাকতে পারে। সেসগুলো গুরুত্বের সঙ্গে গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় চলতি বছর হজ চলাকালে বাংলাদেশী হাজীদের নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরে আরো বলেন, লাখ লাখ টাকা খরচ করে লোকজন হজে গিয়ে নানা কষ্ট করলেও সেসব দেখার কেউ নেই। এমনকি হজ মিশন কিংবা এ্যাম্বেসির কাউকে পাওয়া যায় না। নেই কোনো হেল্প ডেস্ক। অথচ বিনা পয়সায় যারা হজে যান, তারা নানা সুবিধা ভোগ করেন। তিনি বলেন, যাদের যা দায়িত্ব, তারা সেটি সঠিকভাবে পালন করলে কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন বলেন, সরকার প্রশাসন যন্ত্রের মাধ্যমে সকল কাজ সম্পাদন করে। সরকার গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী গণমাধ্যমের মাধ্যমেই জনগণ অবহিত হয়। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার রূপরেখা দিয়েছেন। সেটি বাস্তবে রূপ দিতে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। এ প্রসঙ্গে তিনি সাম্প্রতিক সময়ের আলোচিত ‘দুর্নীতিকান্ড’ নিয়ে বলেন, দুর্নীতি সর্বস্তরে হচ্ছে। দুর্নীতিবাজদের বয়কট করার মাধ্যমে সেটি প্রতিরোধ করা সম্ভব।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) সিনিয়র সচিব মো. মশিউর রহমান এনডিসি বিষয়বস্তুতে ‘গণমাধ্যম’ শব্দের সংযোজন সম্পর্কে বলেন, বর্তমানে গণমাধ্যম দু’ধারায় বিরাজমান। একটি সামাজিক যোগাযোগ এবং অপরটি সংবাদমাধ্যম। তিনি সংবাদমাধ্যমের দায়বদ্ধতা তুলে ধরে বলেন, বর্তমানে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। কাজ করলে ভুল হতে পারে। সেই ভুলগুলো ইতিবাচকভাবে ধরিয়ে দিলে প্রশাসন শুধরে নিতে পারে। কিন্তু তথ্যগত বিভ্রাটের জন্য অনেক সময় ভুল ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।
বিটিআরসির সাবেক চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যামসুন্দর সিকদার গণমাধ্যমের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, সংবাদপত্র হচ্ছে সমাজের দর্পণ। বিভিন্ন স্তরের অনিয়ম-অসঙ্গতি সংবাদপত্রের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন। কাজেই সংবাদপত্রকে দায়িত্বশীল হতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, গণমাধ্যম সমাজের দর্পণ। গণমাধ্যমের মাধ্যমেই সরকারের উন্নয় কর্মকান্ড যেমন প্রচার হয়, তেমনি অনিয়ম-অসঙ্গতিগুলো প্রকাশ পায়।
নজরুল ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এ এফ এম হায়াতুল্লাহ বলেন, উন্নয়ন প্রশাসনকে গণমাধ্যমকে একীভূত করা না গেলে কোন কাজে সফলতা আসবে না। জনগণও পুরোপুরি সুফল পাবে না।
সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, আইনে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা যতটুকু, গণতন্ত্র ততটুকু থাকে। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা বলা হয়। অথচ এ দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান চতুর্থ শিল্প উপযোগী হিসেবে এখনো গড়ে ওঠেনি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ বলেন, উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একের সাথে আরেকটা সম্পৃক্ত। গণমাধ্যম না তাকলে উন্নয়ন থাকে না, গণতন্ত্র থাকে না। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে বর্তমানে গণমাধ্যম সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
মূল প্রবন্ধে জননিরাপত্তা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফা উল্লেখ করেন, যে দেশে প্রচার মাধ্যম স্বাধীন-শক্তিশালী সে দেশে গণতন্ত্র উন্নত এবং উন্নয়নও গতিশীল। উন্নয়ন প্রশাসন ও গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ অঙ্গিকার হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো যুগান্তকারী বিভিন্ন প্রযুক্তি দ্বারা বিনির্মিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়; মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫ শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের উপরে; বিনিয়োগ উন্নীত হবে জিডিপির ৪০ শতাংশে। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক সাক্ষরতা অর্জিত হবে। সকলের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে যাবে। স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা, টেকসই নগরায়নসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সকল সেবা থাকবে হাতের নাগালে। তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি। আর এ সব কিছুর পেছনে মূল লক্ষ্য হবে সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক একটি সুখী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা।।